কিভাবে টেরারিয়াম তৈরি করবেন:
কিভাবে টেরারিয়াম তৈরি করবেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল। কখনও কখনও “কাঁচের নীচে বাগান” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। অ্যাকুয়ারিয়াম শব্দটার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। যে কাঁচের জার এ রঙিন মাছ পোষা হয় তাকেই অ্যাকুয়ারিয়াম বলে। কিন্তু টেরারিয়াম শব্দটি অনেকের কাছেই নতুন। এ শব্দটি ভিভারিয়াম নামক একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে- যার অর্থ হলো ‘প্লেস অফ লাইফ’ বা জীবনের জন্য জায়গা।
স্বল্প পরিসরে কাঁচের পাত্র বা বোতলের মধ্যে গাছ বা লতা-গুল্ম লাগিয়ে ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর যে শিল্প, তাকেই বলা হয় টেরারিয়াম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা কাচের বোতলে করা হয় বলে অনেকে এটাকে ‘বটল গার্ডেন’ বা বোতল বাগানও বলে থাকেন।টেরারিয়াম হচ্ছে এমন একটি ক্ষুদ্র আকৃতির বদ্ধ কাচের কিংবা কনটেইনারের স্থাপনা, যা আর্দ্রতা ধরে রেখে উদ্ভিদ ও গাছপালা জন্মাতে সহায়তা করে।
টেরারিয়াম কি
টেরারিয়ামের উৎপত্তি ভিক্টোরিয়ান যুগে, ১৮২৭ সালে ডা. নেতানিয়েল ওয়ার্ড মথ ও ক্যাটারফিলার নিয়ে গবেষণা করেন। তখন দেখতে পান জারের তলানিতে ছোট ছোট ফার্ন বেড়ে উঠছে এবং সংরক্ষিত কাঁচের ভেতর বাতাস ছাড়া গাছ জন্মাচ্ছে। পরবর্তীতে এটাই ওয়ারডিয়ান কেইজ বা টেরারিয়াম নামে পরিচিতি লাভ করে। আস্তে আস্তে তা সারা বিশ্বের সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের দ্বারপ্রান্তে প্রবেশ করে। তবে বাংলাদেশে দুই দশক ধরে এর দেখা মিললেও এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
শখের টেরারিয়াম তৈরি করার পদ্ধতি
কিভাবে টেরারিয়াম তৈরি করবেন তার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। কনটেইনার অবশ্যই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার হতে হবে। প্লাস্টিকের পাত্রের চেয়ে কাঁচের পাত্রে পানি চলাচল সুবিধাজনক। পাত্রের বাইরে থেকে যেন ভেতরের গাছপালা পরিষ্কারভাবে দেখা যায় তা মনে রাখতে হবে। সাধারণত হালকা রংয়ের উপাদান সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যদিও টেরারিয়াম আলঙ্কারিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়, তবে এর আকার কেমন হবে তা নির্ধারিত হয় ব্যক্তির সৃজনশীলতার ওপর। ওয়াইন গ্লাস, বেল জার, কাঁচের পাত্র বা বোতল এমনকি অ্যাকোরিয়ামের পাত্রও কনটেইনার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাত্রের আকার, আকৃতি কিংবা খোলা মুখ কেমন হবে তা নির্ভর করে কী ধরনের এবং কেমন আকৃতির গাছ কনটেইনারে লাগানো হবে তার ওপর।
কনটেইনার প্রস্তুত :
বায়ু চলাচল করার জন্য কনটেইনারের তলানিতে ১ থেকে ২ ইঞ্চি পরিমাণ নুড়ি, বালি কিংবা ভগ্ন পাত্রের টুকরা দিয়ে সাজাতে হবে। কাঠকয়লার দানাদার একটি পাতলা স্তর বিছিয়ে দেয়া যায় । তলানির অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার জন্য মস বা শেউলা উপরে দেয়া যেতে পারে। বদ্ধ পরিবেশে দুর্গন্ধ দূর জন্য মসের ওপর কাঠকয়লার স্তর ছিটিয়ে দেয়া হয়। নুড়ি পাথরের পরিবর্তে কাঠকয়লার ১ থেকে ২ ইঞ্চি স্তর ব্যবহার করা যেতে পারে। তারপর দেড় থেকে ২ ইঞ্চি উর্বর মাটি দিয়ে গাছ লাগানোর উপযুক্ত করা হয়।
আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে,প্রথমে কাঁচের পাত্রে আধা ইঞ্চি মাপের পাথরকুচি দিয়ে দেড় ইঞ্চির একটা স্তর বানান। এই স্তরের ওপর অ্যাক্টিভেটেড চারকোলের আর একটা স্তর তৈরি করুন। অ্যাক্টিভেটেট চারকোল আপনি যে কোন অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকানেই পেয়ে যাবেন। এরপর এর ওপর কী ধরনের গাছ রাখবেন তার ওপর নির্ভর করে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পুরু মাটির স্তর বানান।
গাছ নির্বাচন :
গাছ নির্বাচন টেরারিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায় এমন গাছ নির্বাচন করা উচিত। স্বল্প আলোয় জন্মাতে পারে এমন গাছ পছন্দ করা যায়। যদি একসঙ্গে অনেক গাছ লাগাতে চান, তবে পাতার আকার, আকৃতি ও রং দেখে তা নির্ধারণ করতে হবে। একঘেয়েমি দূর করার জন্য বিভিন্ন আকার, আকৃতি, রংয়ের গাছের কিংবা বিচিত্র উপস্থাপনা করা যেতে পারে ।
বোতল বাগানে সাকুলেন্ট জাতীয় (সরস বা রসালো জাতীয়) গাছ রাখতে পারেন। সাকুলেন্ট জাতীয় গাছ হলো সেই ধরনের গাছ যেগুলো কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা,পাতা বা মূলে পানি জমিয়ে রাখে । তবে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত আর্দ্রতার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফার্ন, মস জাতীয় গাছও রাখতে পারেন অথবা সব ধরনের মিলিয়েও রাখা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে একটি মূলগাছকে কেন্দ্র করে চাইনিজ বাম্বু, ফার্ন ,ক্রোটিন, সেডাম প্রভৃতি রাখা যায়, এতে এর সৌন্দর্যও অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। একটু অভিজ্ঞ হয়ে গেলে আপনি টেরারিয়ামে অর্কিডও রাখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, গাছ যেন টেরারিয়ামের আকার অনুযায়ী রাখা হয়।টেরারিয়ামে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি স্প্রে করতে হবে। অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে কাঁচের গায়ে জলীয় বাষ্প জমলে ওপরের ঢাকনাটা খুলে দিতে হবে। বিভিন্ন পোকার সংক্রমণ থেকে গাছকে বাঁচাতে কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।টেরারিয়াম তৈরি করলেই ঘরের সৌন্দর্য শতভাগ বাড়বে না। পরিপূর্ণ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে কিংবা বৈচিত্র আনতে টেরারিয়ামে শামুক কিংবা বিভিন্ন রঙিন পাথরও ব্যবহার করতে পারেন।
যত্ন ও ব্যবস্থাপনা :
গাছ লাগানোর পর কনটেইনারের গায়ে মাটি লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে । পানি স্প্রে করার সবচেয়ে ভাল উপায় হলো সরাসরি গাছে না করে কনটেইনারের গায়ে করা। যদি মাটি শুকিয়ে যায় তাহলে সামান্য পরিমাণ পানি স্প্রে করা। আবার মাটি অত্যধিক আর্দ্র হলে কনটেইনারের মুখ খুলে দিতে হবে। সাধারণত জৈব সার টেরারিয়ামে ব্যবহার করা হয় তবে অজৈব সারও ব্যবহার করা যায়। যদি গাছের শাখা-প্রশাখা বেড়ে যায় তাহলে ছাঁটাই করে দিতে হবে।
টেরারিয়াম পরিপূর্ণ অবস্থায় যাবার জন্যে কিছু সময় দিতে হবে ,টেরারিয়াম সরাসরি রোদে রাখা যাবে না। যদি গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় তবে পানিতে দ্রবীভূত হয় এমন সার প্রয়োগ করতে হবে।
প্রাপ্তিস্থান :
বাংলাদেশে টেরারিয়াম এখনো এত জনপ্রিয় না হলেও ঢাকার অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডির অভিজাত ফুল বা গাছের দোকান এ টেরারিয়াম পাওয়া যেতে পারে। পাঁচ তারা হোটেলে কিংবা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে প্রায়ই টেরারিয়াম দেখা যায়। টেরারিয়ামের মূল্য নির্ভর করে অবকাঠামো কিংবা উপাদানের ওপর। তবে দাম ভিন্নতা অনুসারে ২ হাজার থেকে ১৫0000 হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে । তবে আমার মনে হয় যদি আপনি নিজেই একটি টেরারিয়াম তৈরী করতে পারেন তার আনন্দ আপনার মন কে অনেক বেশি প্রফুল্ল করবে ।
সবাই ভাল থাকবেন ।