বাগান বিলাস ফুল | বাগান বিলাস বনসাই

বাগান বিলাস ফুল

বাগানের সৌন্দর্য বর্ধনের একমাত্র উপায় হল বাগান বিলাস ফুল করার আগ্রহ। খুব সহজেই কোন বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। গাছকে খুব সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা নেয়া করা যায়। নিজের মনমানসিকতার পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে বাগান গোছানো যায়।

বাগান সাজানোর উপাদানঃ

বাগান শিল্পকে মাঝে মাঝে জীবন্ত শিল্পও বলা হয়। শিল্পের যে কোন রূপের মতো উদ্যানবিদ্যাও বিষয় কেন্দ্রিক। দর্শকের চোখে বাগান কে দৃষ্টিনন্দন করতে উদ্যানবিদ্যা সম্পর্কে একজন বাগানির যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। যদিও বাগান সাজানোর উপাদানর নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই তবুও এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট কিছু উপকরণ আছে যা বাগানি কে বাগান গোছাতে সাহায্য করবে।

বাগান সজ্জার উপকরণ সমূহঃ

বাগান বিলাস ফুল  বাগান করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে ঠিকই কিন্তু সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট কোন আইন নেই যা বাগানিকে বাগান করার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে পারে। তাই বাগান করারা সময় নিজের খেয়াল মতো এবং নিজের মানসিক উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। একটি বাগান নিজের পছন্দের উপর ভিত্তি করেই সাজানো যায়। মাঝে মাঝে বাগানকে নয়নাভিরাম করতে গিয়ে তা এলোমেলো হয়ে যায়।  তাই যখনই মনে হবে যে বাগানটিকে বিশৃঙ্খল দেখাচ্ছে বা সাজানো পছন্দ হচ্ছে না সেক্ষেত্রে কিছু উপাদান আপনার বাগানকে সংযোগশীল করতে পারে। বাগান করার ক্ষেত্রে গাছের প্রতিলিপি  তৈরি, কেন্দ্রিকরন এবং বর্ণ বিষয় তাত্ত্বিক ভাবে খুবই সহজ যা, প্রায়োগিক দিক থেকে অতোটা সহজ নয়। কিন্তু নিম্ন উল্লেখিত কিছু  বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলে বাগান করার কঠিন দিক সমূহকে আপানর জন্য সহজ হয়ে যাবে।

বাগান কে দৃষ্টিনন্দন

১. বাগান কাঠামোঃ বাস্তবিক অর্থে বাগান বিলাস ফুল  বাগানকে একীভূত করার জন্য সকল উপাদান সমূহের মাঝে বাগান কাঠামোর ধারণা প্রায়োগিক অর্থে বেশ কঠিন। বাগান কাঠামোকে একটি বাড়ি কিংবা একটি গল্পের সাথে তুলনা করা যায়, কারণ এ গুলো তৈরির পূর্বে  যেমন একটি শক্ত কাঠামোর প্রয়োজন হয়,বাগানের ক্ষেত্রে ও ঠিক তাই। যখন কোন বাগানের প্রতিটা গাছের আকার বা উচ্চতা এক হয় তখন সেই বাগানে কাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকে, একটি সঠিক কাঠামো যুক্ত বাগানে কিছু ছোট গাছ এবং গুল্ম থাকবে এবং তা চির সবুজ হবে। ছোট পরিসরের মাঝে বাগান কে চির সবুজ করা একটু কষ্ট সাধ্য হতে পারে তবে ক্ষুদ্র গাছ সমূহ ছোট পরিসরেও বাগানকে সুন্দর ভাবে চিরসবুজ রাখে। এরা বাগানকে দৃষ্টি নন্দন করে এবং পাখ-পাখালি এর আগমন ঘটায়।

২. রঙঃ বাগানের রঙ বাছাই করা নতুন বাগানিদের জন্য একটি বড় বাধা। আমরা তুলিতে রঙ ব্যাবহার এর ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করা পছন্দ করি না। একটি মজার বিষয় হল, অনেকে রঙের ক্ষেত্রে নীলাভ লাল কিংবা কমলা লালের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারে কিন্তু বিভিন্ন লাল ফুলের ক্ষেত্রে তা পারেনা। কোন রঙের প্রতি যদি নিজস্ব কোন পছন্দ থেকে থাকে যেমন বাগানে কমলা কিংবা হলুদ রঙের আধিক্য ভালো লাগে তবে সেই রঙের ফুল বাছাই এর ক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রসর হয়ে যাবেন। আপনি আপনার পছন্দের সব রঙ কিনতে পারেন কিন্তু বাগানের সৌন্দর্য রক্ষার ক্ষেত্রে আপনাকে সে গুলো ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থাপন করতে হবে। বাগানের গাছের রঙ বাছাই এর ক্ষেত্রে অবস্যই মনে রাখতে হবে, একি রকম রঙের এর তিন চারটি গাছ যেন একত্রে না হয়ে যায়। কিছু সবুজ গুল্মের কাছে একটি বা দুটি লাল ফুলের গাছ বাগানকে অধিক দৃষ্টি নন্দন করে তোলে। সেই সাথে অল্প কিছু হলুদ ফুল থাকতে পারে। যদি বাগানটি পাত্রের মাঝে হয়, যেমন কোন ফ্ল্যাট এর বারান্দায় যদি হয়, তবে পাত্রের রঙ বাছাই এর খেত্রেও সতর্ক হতে হবে। ফুলের সাথে মানান সই রঙের পাত্র বাগানকে অধিক দৃষ্টি নন্দন করে।

৩. কেন্দ্রিকরনঃ আমরা যখন বাগান করি তখন বেশীরভাগ সময়ই আমাদের সবারই  মনোযোগ আসে বাগানে জন্মানো অসম আকৃতির গুল্ম বা ঘাস এর কথা। আমরা কখনই আমাদের বাগানে একজন অপরিচিতর দৃষ্টিতে দেখি না।আসলে, বাগানকে এক দৃষ্টিতে দেখে কখনই পরিমাপ করা যায় না। এটা নিয়ে অলস সময়ে দীর্ঘ মুহূর্ত নিয়ে ভাবতে হবে। এটা করার একটা সহজ উপায় হল, বাগানের কেন্দ্রিয় অংশে নজর রাখতে হবে। বাগানের কেন্দ্রে কিছু বড় বৃক্ষ, দৃষ্টি নন্দন কোন কাঠামো বা কিছু কারুকার্য থাকাতে পারে, যা প্রথমেই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং আপনি ধীরেধীরে চার পাশে নজর দিতে পারবেন। কখনই ভাববেন না, আপনার বাগান কেন্দ্রিকরন করার জন্য ছোট, এমন কি পাত্রে বাগান এর ক্ষেত্রেও বাগান কেন্দ্রি করন করা যায়।

৪. অভ্যন্তরীণ বিন্যাসঃ নরম রেশমি কাপড়, পশমি জামার যেমন নিজস্ব সৌন্দর্য আছে তেমনই বিভিন্ন রকমের গাছ আপনার বাগানের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যকে তাদের নিজস্ব গুন দিয়ে আরো বর্ধিত করে। আপনি হয়তো কোমল, তরঙ্গময় গাছ পছন্দ করেন কিন্তু সমগ্র বাগানে যদি আপনি শুধু এই বৃক্ষ গুলোই রাখেন তবে বাগানের সৌন্দর্য গুলিয়ে যাবে। আপনার বাগানে অবশ্যই কমল গাছের সাথে বড় অমসৃণ গাছের অবস্থান ও থাকতে হবে। গাছের এই তারতম্য আপনার বাগান কে অধিক  দৃষ্টি নন্দন করে তুলবে এবং ভিন্ন এক আঙ্গিক দিবে। সৌভাগ্য জনক ভাবে, বাগানের অভ্যন্তরীণ বিন্যাস বাগান সজ্জার সবচেয়ে সহজ উপাদান।

৫. বাগানের ধ্বনিঃ বাগান সজ্জার অন্যান্য উপকরনের মাঝে বাগানের ধ্বনি তালিকায় সবার নিচে স্থান পেয়েছে। কিন্তু একটি বাগানের মাঝে শব্দই হল বাগানের প্রাণ। এটা বাতাসে পাতার শব্দ বা পায়ের নিচে কাঁকড়ের চিড়বিড় শব্দ বা পাখির গান বা পানি ঝরার শব্দ যে কোনোটাই হতে পারে। তবে শব্দের মাত্রা পরিমিত এবং পরিকল্পনা মাফিক হতে হবে। বাগান করার সময়টা নির্জন সময়ে হতে হবে এবং মনমুগ্ধকর শব্দ আপানার বাগান করার জন্য আপনার চিত্তকে উৎকর্ষিত করে।

বাগানের সৌন্দর্য বর্ধনের নির্দিষ্ট কোন বিজ্ঞান নেই এবং এর মূল উপাদান সমূহকে বিভিন্ন নামে বর্ণনা করা হয়। নিম্নোক্ত ৩ টি শ্রেণী একটি ভালো বাগানের জন্য গ্রহনযোগ্য সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ উপাদান সমূহ গৃহীত   হয়। মনে রাখতে হবে, বাগানের সাজ-সজ্জা সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত  বিষয় এবং এর নিয়ম ভঙ্গ করা যায়।

বিন্যাস/সামাঞ্জস্যতা/অংশঃ বিন্যাস বাগান সজ্জার একটি প্রধান উপকরণ। একটি বাগানে বিন্যাস গাছের পুনঃ স্থাপন, বর্ণ  এবং উজ্জ্বল ও বড় বৃক্ষের ভারসাম্য রক্ষার ভিত্তিতে বাগান প্রতিসাম্য হতে পারে।

মিল বা একত্রি করণঃ বাগানের প্রতিটা আলাদা আলাদা অংশ একত্রে বাগানকে সৌন্দর্য প্রদান করে। এই একত্রিকরণ বাগানে রঙের ব্যাবহারে সামাঞ্জস্য, গাছের পুনঃ বিন্যাস এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রবিন্দুর উপর নির্ভর করে। বাগানের বিষয়বস্তু বাগানকে একত্রিকরণে সাহায্য করে। যেমনঃ ধবধবে সাদা বাগান, প্রজাপতির বাগান কিংবা কুঁড়ে ঘরের সামনে বাগান ইত্যাদি।

সাবলীল, পরিবর্তনশীল কিংবা ছান্দিকঃ বাগানকে সাবলীল করে তুলতে এর নিয়মিত পরিবর্তনের উপর সর্বদা নজর রাখতে হবে।ক্রমে ক্রমে গাছের উচ্চতা এবং রঙের পরিবর্তন বাগানের সৃষ্টিশীলতাকে নষ্ট করে দেয়। বড় পরিসরের বাগানের নিয়মিত পরিবর্তন দর্শকের দৃষ্টি ভ্রমের সৃষ্টি করতে পারে। এই পরিবর্তনটা বিভিন্ন ভাবে আনা যেতে পারে। ছোট গাছগুলোকে ক্রমান্বয়ে বড় গাছের সামনে নিয়ে আসলে বাগানের পরিবর্তনশীলতার সাথে সাথে এর উৎকর্ষও সাধিত হয়।

অবশ্যই উপরিউক্ত উপাদান গুলোর সাহায্যে নিজের ব্যাক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী বাগান বিলাস ফুলের বাগানের সৌন্দর্য বর্ধন করা যায়। তথাপি অন্যান্য আরও বিভিন্ন উপাদান আছে যা ব্যাবহারের মাধ্যমে বাগানকে অধিক দৃষ্টিনন্দন করে তোলা যায়। সুগন্ধ এবং সুধ্বনির মাধ্যমে বাগান অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। বাগানকে যে ভাবেই সাজানো হোক না কেন, সকল ক্ষেত্রেই তা ভালো দেখাবে, তাই বাগানের সজ্জার ক্ষেত্রে ভয় পাবার কোনই কারন নেই।

 

 

Sell Your Product With Us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Want to write on Methopoth? Submit your article here ...