স্টেভিয়া হতে পারে চিনির বিকল্প উৎস

স্টেভিয়া হতে পারে চিনির বিকল্প উৎস

স্টেভিয়া হতে পারে চিনির বিকল্প উৎস, স্টেভিয়া আমাদের দেশে নতুন হলেও এটি আসলে নতুন ফসল নয়। আমাদের দেশে ওষুধি গাছ হিসেবে যাত্রা করলেও আস্তে আস্তে যোগ্যতার জন্য বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে স্বীকৃতিপাচ্ছে আস্তে আস্তে। এটি চিনির চেয়ে ৩শ’ গুণ বেশি মিষ্টি। শুনে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। গাছটির নাম বলা যেতে পারে মধুগাছ কিংবা মিষ্টিগাছ। গাছটির আদিবাস প্যারাগুয়েতে। পরে আমেরিকা, চীন, কানাডা, কোরিয়া, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড মেক্সিকোসহ আরো অনেক দেশে চাষ শুরু হয়েছে। তবে জাপানে বেশি ব্যবহৃত হয়। ২০১১ আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ব্যবহার ছিল না। ২০১১ তে ব্যবহার শুরু হয়। আমাদের দেশে অনেক আগ্রহী মানুষ, বিভিন্ন স্থানে নার্সারিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা উৎপাদন শুরু করেছে। সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস প্রতিরোধক ও চিনির বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়া আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হচ্ছে। পাতা সবুজ অবস্থাতেই চিনির চেয়ে ৩শ’ গুণ বেশি মিষ্টি। পাতা শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করলে মিষ্টির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।

স্টেভিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম Stevia disambiguation; Stevia rebaudiana.। এর মধ্যে কোনো ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেড নেই। যার কারনে ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা অনায়াসে খেতে পারেন। এছাড়া ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ, উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধসহ ত্বকের ক্ষত নিরাময় করে। গবেষকগণ চেষ্টা চালাচ্ছেন এর মধ্যে আর কিকি ভালো গুণ পাওয়া যায়।

stevia-leaf

এটি আবাদের জন্য দোআশ ও বেলে দোআশ মাটিতে সবচেয়ে ভালো হয়। পানি জমে না, রোদ পড়ে এমন জমিতে চাষ করতে হবে। শুধু এ্যাটেঁল মাটিতে চাষ না করাই ভালো। এভাবেই স্টেভিয়া হতে পারে চিনির বিকল্প উৎস। অন্যান্য ফসলের মতো ৪/৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও জমি সমান করে নিতে হবে। স্টেভিয়ার বীজ ৭-৮ দিন গ্রীন হাউসে রেখে গজিয়ে তারপর রোপণ করাই ভালো। টিস্যু কালচার চারা দিয়ে চাষ করা যায়। নিকস্থ কোনো নার্সারি থেকে চারা কিনে চাষ করতে পারেন। তাছাড়া গাছের কাটিং বা শাখাকলম থেকে চাষ করা যায়। প্রতি শতকে প্রায় ৫শ’টি চারা লাগে। চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬-৭ ইঞ্চি এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১৮-২০ ইঞ্চি হলে ভালো হয়। স্টেভিয়ার সারের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। তারপরও মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনমতো সার দিতে হবে। গোবর ও খৈল পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে। তবে অনুমোদিত গড় মাত্রা হলো বিঘাপ্রতি ইউরিয়া-৩ কেজি, টিএসপি-৬ কেজি, এমওপি- ৬ কেজি সারসহ অন্যান্য সার দিতে হবে।

উদ্ভিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের জন্য চারা রোপণ করার পর স্টেভিয়া ক্ষেতে বারবার সেচ দিতে হবে। শুকনো মৌসুমে একদিন পর পর সেচ দিতে হবে। গাছের কাণ্ডের অগ্রভাগ শুকিয়ে গেলে সেচের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পানি জমে না থাকে। পানি জমার সাথে সাথে নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিচযার ক্ষেত্রে স্টেভিয়া ক্ষেতে আগাছা হলে তা নিড়ানি দিয়ে তুলে ফেলতে হবে। জমি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেপ্টেরিকা ও স্কোরোশিয়ানা এ দুটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়ে থাকে। পোকামাকড়ের মধ্যে কাটওয়ার্মের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। এরজন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।

জমিতে চারা রোপণের পর কোনো কারণে চারা মরে গেলে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। যেকোনো রোগবালাই দেখা দিলে সাথে সাথে দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বেশি শাখা হলে ছাঁটাই করার ব্যবস্থা নিতে হবে। একথা প্রমাণিত স্টেভিয়ার পাতা উচ্চ রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। যকৃত ও প্লীহায় পুষ্টি সরবরাহ করে। ত্বকের ও দাঁতের ক্ষয়রোধসহ খাদ্য হজমে সহায়তা করে। চিনির বিকল্প হিসেবে সবাই খেতে পারেন স্টেভিয়া । এটি শরীরের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। পাতা সবুজ ও শুকনো চিবিয়ে কিংবা চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে বোতলে সংরক্ষণ করা যায় দীর্ঘদিন ধরে। অনেকে পানের সাথে মিষ্টি জর্দার পরিবর্তে স্টেভিয়া গুঁড়া করে ব্যবহার করেন। বর্তমানে আমাদের দেশে স্টেভিয়ার চাহিদা আস্তে আস্তে বাড়ছে। তবে বিদেশে এর অনেক বড় বাজার রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন বর্তমানে ১ একরে স্টেভিয়া চাষ করে বছরে ৪-৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। মাটি, উর্বরতা, শ্রমিক খরচ, আবহাওয়া সব কিছু মিলিয়ে একটু পরিকল্পিতভাবে চাষ করতে পারলে আামদের টোটাল সমৃদ্ধি আরো বেশি হবে। আমরা বেশ লাভবান হবো।স্টেভিয়া হোক আমাদের বিশেষ করে ডায়বেটিকস রোগেীদের নিত্য সঙ্গী।

লেখক :- ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম

(সংগৃহিত)

 

Sell Your Product With Us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Want to write on Methopoth? Submit your article here ...