খরগোশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

খরগোশের খামার বাংলাদেশে একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। এর চামড়া অত্যন্ত নরম এবং দেখতেও সুন্দর আর তাই শুধু মাংস নয়, পোষার জন্য এটি খুবই জনপ্রিয় একটি প্রানি। আর তাই,ধীরে ধীরে খরগোশের খামার গড়ে উঠছে। যদিও এগুলো মূলত শখের বশে আর এই খামার গুলো থেকেই পোষার জন্য মানুষ খরগোশ সংগ্রহ করে। 

খরগোশের মাংস এবং চামড়া উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে এর মাংস জনপ্রিয় নয় যদিও এটি ধর্মীয়ভাবে হালাল। খরগোশের মাংসে প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।

খরগোশ পালনের সুবিধা

১. খরগোশ দ্রুত বর্ধনশীল একটি প্রাণী।

২. এক সাথে ২-৮ টি বাচ্চা প্রসব করে।

৩. বছরে বেশ কয়েকবার বাচ্চা প্রসব করে।

৪. জায়গা ও খাবার কম লাগে ফলে অল্প খরচে অধিক উৎপাদন সম্ভব।

৫. পারিবারিকভাবে পালন করা যায়।

৬. খরগোশের মাংস অধিক পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। 

৭. সব ধর্মের মানুষই এর মাংস খেতে পারে।

৮. মাংস উৎপাদনে পোল্ট্রির পরেই খরগোশের স্থান।

৯. রান্না ঘরের উচ্ছিষ্টাংশ, বাড়ীর পাশের ঘাস ও লতা-পাতা খেয়ে এদের পালন করা সম্ভব।

খরগোশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে আর তাই বাণিজ্যিক ভাবে এখনি এর খামার করার বিষয়ে অভিজ্ঞদের এগিয়ে আসা দরকার তবে শুরু করার জন্য কিছু বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। যেমন:

  • জাত  নির্বাচন
  • খাবার এবং পানির ব্যবস্থা
  • জায়গার ব্যবস্থা                                      
  • খরগোশের স্বাস্থ্যসেবা 

জাত  নির্বাচন

খরগোশের জাতের মধ্যে দেশি এবং বিদেশি জাতের খরগোশ রয়েছে। দেশি জাতের খরগোশ তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায়। তবে বিদেশি জাতের খরগোশের মাংস এবং চামড়ার মান বেশি। এছাড়া এগুলো দেখতেও খুবই সুন্দর আর তাই এদের মূল্যও এখনো সাধারনের সাধ্যের বাইরে। 

খাবার এবং পানির ব্যবস্থা

খরগোশের খাবারের মধ্যে ঘাস, খড়, কলা, সবজি, ফল, ভুট্টা, গম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তারা সবুজ ঘাস ও কলমি শাক খুব পছন্দ করে,এছাড়া ভুষি দেয়া যেতে পারে। খরগোশের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকতে হবে। 

জায়গার ব্যবস্থা

খরগোশের ঘর এমন হতে হবে যাতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সমৃদ্ধ  জায়গা থাকে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। খরগোশের জন্য শুষ্ক এবং পরিষ্কার জায়গা, খাবার এবং পানির পাত্র এবং বিশ্রামের জায়গা থাকা প্রয়োজন।

খরগোশের স্বাস্থ্যসেবা

 খরগোশের খামারের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
খরগোশ

খরগোশের স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের নিয়মিত টিকা দেওয়া এবং রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। 

খরগোশের মাংস খাওয়ার ধর্মীয় ব্যাখ্যা

খরগোশের মাংস মুসলমানদের জন্য হালাল। পবিত্র কুরআন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, খরগোশের মাংস খাওয়া মুসলমানদের জন্য জায়েজ করা হয়েছে।

এই বিষয়ে সুরা মা’য়েদাহ্তে মহান আল্লাহ বলেছেন

তোমাদের জন্য হারাম (অবৈধ) করা হয়েছে মরা পশু, রক্ত ও শুকরের মাংস।আল্লাহ ভিন্ন অন্যের নামে উৎসর্গীকৃত পশু, গলাচেপে মারা জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, পতনে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু হারাম। যবেহ দ্বারা পবিত্র করা ছাড়া মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলী দেয়া পশুও হারাম (তৃতীয় রুকু সুরা মা’ য়েদাহ্)। বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ “হিদ্রায়া”তে উল্লেখ করা হয়েছে, খরগোশের গোস্ত খাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই।নবী করিম ছালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম তাঁর সামনে উপস্থাপিত খরগোশের ভুনা গোস্ত খেয়েছেন এবং তা খাওয়ার জন্য সাহাবায়ে কেরামকেও নির্দেশ দিয়েছেন।আর খরগোশ মুর্দাখোর ও হিংস্র জন্তুর অন্তর্ভুক্ত নয় (দুররুল মুখতার)।বিড়াল ও বকরীর ন্যায় কান বিশিষ্ট দুই প্রকার খরগোশের গোস্ত খাওয়া বৈধ (তালীফায়ে রাশিদিয়া-পৃষ্ঠা-৪৫০)।

খরগোশ পালন করাও ইসলামি শরিয়ত মতে বৈধ করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ হাদিসের গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে আনাস ইবনে মালেক রা. বলেছেন

‘মক্কার মাররুজ জাহরান এলাকায় একটি খরগোশকে আমরা ধাওয়া করলাম। আমার সাথে আরও অনেকেই সেটির পেছনে ছুটছিলো। এক পর্যায়ে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়লো। আমি হাল না ছেড়ে ছুটতে থাকলাম। শেষে খরগোশটিকে ধরে ফেললাম। খরগোশটিকে আবু তালহার কাছে নিয়ে গেলে তিনি সেটিকে জবাই করেন। এর পেছনের অংশ ও উভয় রান রসুলের সা. এর কাছে পাঠান। আমি সেগুলো রসুলের সা. কাছে নিয়ে গেলে তিনি তা গ্রহণ করেন। (মুসলিম ১৯৫৩)

যেসব জন্তু শিকার নখ দিয়ে চিরে ফেড়ে খায় সেইসব জন্তু খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব জন্তুর পায়ে লম্বা নখ থাকে এবং খাওয়ার কাজে তারা এর ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু খরগোশ এই জাতীয় জন্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়। এরা তৃণভোজী প্রাণী। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এরা গাছে উঠে এবং মাটি খুঁড়ে গর্ত করে। তাই খরগোশের মাংস খাওয়ায় ধর্মীয় ভাবে কোন নিষেধ নেই। তাই পালা এবং খাওয়ার জন্য খরগোশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক বেশি।

সতর্কতা  

খরগোশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা  অবশ্যই একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। তবে খামার শুরু করার আগে উপরোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই  বিবেচনা করে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে, যেহেতু এই বিষয়ে এখনো সেভাবে সবাই কাজ করছে না, তাই সঠিক ভাবে খামার করতে পারলে এখান থেকে ভালো মুনাফা সম্ভব কিন্তু অতি আবেগি হয়ে খামার না করতে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। 

পরবর্তী কোন পর্বে আমরা খরগোশের মাংস খাওয়ার ধর্মীয় ব্যাখ্যা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব, এছাড়া কিভাবে খামার করবেন বা ঘরোয়া ভাবে পালন করবেন -সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।  

খরগোশ নিয়ে আমাদের এই লেখাটি আপনাদের উপকারে আসতে পারে

শীতে খরগোশের যত্ন

 

 

 

 

Sell Your Product With Us

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Want to write on Methopoth? Submit your article here ...