কোন মাটিকে আদর্শ মাটি বলা হয়
আগের অংশে আমরা বাগান এর মাটির গঠন , মান , উর্বরতা ইত্যাদি বিষয়ে জেনেছি ।এই অংশে আমরা কোন মাটিকে আদর্শ মাটি বলা হয় অন্যান্য উপাদান গুলো সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো ।
মাটির উর্বরতা এবং উপাদনের মজুদের ভিত্তিতে সবজি বাগান করার জন্য নির্ধারন করা উচিৎ।উর্বরতা হল মাটির প্রয়োজনীয় উপকরন এবং পি, এইচ এর সমন্বয়।মাটির উপাদান হল মৃত্তিকা কণার আকার এবং তাদের সন্নিবেশন।সবজি বাগান /বাগান করার জন্য প্রয়োজনীয় মাটির উপাদান গুলো হল নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম।
নাইট্রোজেন:
সবল পাতা এবং কাণ্ডের বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন অতি জরুরি।মাটিতে নাইট্রোজেন প্রস্তুতকারী ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করার মাধ্যমে নাইট্রোজেন এর সহজ প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা যায়। মাটিতে নাইট্রোজেন অধিক সময়ের জন্য থাকেনা।চারা নাইট্রোজেন ব্যাবহার করে এবং তা মাটিতেই ক্ষয় হয়ে যায়।এটা পানিতে দ্রবীভূত এবং দ্রুত পানি দিয়ে ধুয়ে যায়।আবার, নাইট্রোজেনের আধিক্য অধিক পাতা তৈরি করে যা ফুল ও ফল ধরতে বাধা দেয়।
ফসফরাস:
মূলের বৃদ্ধির জন্য ফসফরাস অতিপ্রয়োজনীয়।ফুলের কলি এবং মুলত শস্য সবসময় কিছু ফসফরাস ব্যাবহার করে ।তাই কলি যুক্ত চারারোপণের ক্ষেত্রে সর্বদা হাড়-চূর্ণ ব্যাবহারের পরামর্শ দেয়া হয় ।ফসফরাস ফুল উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য।
পটাশিয়াম :
চারার সামগ্রিক শারীরিক বর্ধনের জন্য পটাশিয়াম অতি জরুরি ।ইহা চারাকে বর্ধনশীল রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।নাইট্রোজেন এর মতো পটাশিয়াম ও পানিতে দ্রবণীয় এবং কিছুদিন পরপর তা পুনরায় দিতে হয়।
উপরের তিনটি প্রাথমিক উপাদান ছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র উপাদান আছে যা চারার স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য জরুরি । যেমনঃ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, মেলবোডিনাম ইত্যাদি।
পি, এইচ :
মাটির পি, এইচ, সম্পর্কে ধারণা বেশ কঠিন । এটা মাটির আম্লতা বা ক্ষরতা নির্ধারণ করে । পি, এইচ এর মাত্রা ১ থেকে ১৪ নির্ধারন করা হয় । ৭ কে স্বাভাবিক বলা হয়।এর মাত্রা ৭ থেকে কম হলে মাটিকে অধিক অম্লধর্মী ধরা হয় এবং ৭ এর বেশি হলে ক্ষরতাধর্মী মনে করা হয় । মাটির পি, এইচ গুরুত্ব পাচ্ছে কারন যদি এর মাত্রা নির্দিষ্ট মানের মাঝে হয়ত বা মাটির উপাদান সমুহ সহজ প্রাপ্য হবে । অনেক গাছ কম অম্লধর্মী মাটিতে বেড়ে উঠার উপযোগী কিন্তু সকল গাছের ক্ষেত্রে তা ঠিক নয় । তাই সঠিক গাছের সাথে উপযোগী করে মাটির পি, এইচ এর পরিবর্তন করতে হবে।মনে রাখতে হবে , মাটির পি, এইচ এর পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ এবং তা সময়ের সাথে সাথে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে।তাই পুনঃ পুনঃ পরিচর্যার প্রয়োজন।
উপাদান :
মাটির উপাদান মাটির উর্বরতা থেকে কিছুটা ভিন্ন । মাটিতে বিভিন্ন কনার আকার এবং তাদের উপস্থিতি হল মাটির উপাদান ।উপাদানের ভিত্তিতে মাটিকে দুই ভাগে বিভিক্ত করা হয়েছে । বেলে মাটিতে কনার আকার বড় থাকে ।পানি, বাতাস এবং গাছের মূল সহজেই বেলে মাটিতে চলাচল করতে পারে, তবে মাঝেমাঝে তা অতিরিক্ত।মাটির অন্য আর একটি রূপ হল কাদা মাটি।কাদামাটির উপাদান গুলো একত্রে সন্নিবিসিত থাকে এবংপানি, বাতাস বা মূলের চলাচলের জন্য খুব কম জায়গা খালি রাখে।
মাটির উপাদান পরীক্ষা করার একটি সহজ উপায় হল মাটির একটি বল তৈরি করা ।যদি এটা সহজেই ফেটে যায় তবে বুঝতে হবে মাটি বেলে, অন্যথায় এটা দিয়ে যদি হাতের আঙ্গুলের দ্বারা ফিতার মতো তৈরি করা যায় তবে তা কাদামাটি।
মাটির সবচেয়ে বড় গুন হল তাতে জৈব পদার্থের উপস্থিতি যা চারা কে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে ।যে কোনো সাধারন বাগানের ৯০% মাটিতে জৈবপদার্থের অবশিষ্টাংশ থাকে এবং মাত্র ১০% মাটিতে জৈব পদার্থ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।যা পোকামাকড় এবং ক্ষুদ্র জীবাণু দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে । তাই, মাটিতে অতিরিক্ত জৈব পদার্থ এর মিশ্রণ উপকারী ক্ষুদ্র জীবাণুদের খাদ্যপ্রস্তুত করতে সহায়তা করে যা জৈব পদার্থ পঁচিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।কেঁচো এবং মাটিতে বসবাসকারী অন্যান্য পোকামাকড় মাটির ভিতর দিয়ে চলার সময় মাটিকে খনন করে এবং তাদের পচন মাটিতে অধিক জৈব পদার্থ যোগ করে।এই সকল কার্যক্রম মাটিকে আরও সুস্বাস্থ্য প্রদান করে।
বাগানির অনেক কার্যক্রম মাটির জৈব পদার্থ নষ্ট করে দেয়।যেমন, কীটনাশক এবং অজৈব সার প্রদান করা।চারায় কীটনাশক প্রদান করলে তা মাটির অনেক উপকারি পোকা এবং ক্ষুদ্র জীবাণু ধ্বংস করে দেয়।অজৈব সারে লবণ থাকে যা মাটিতে বসবাসকারি জৈব পদার্থ সমূহকে নির্জীব করে দেয় এবং চারার অনেক ক্ষতি করে।অজৈব সার হয়তো সাময়িকভাবে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যাবহার করলে মাটির অনেক গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যায় ।আর মনে রাখতে হবে যে, অজৈব সার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে মোটেও সহায়ক না ।
(ই )
..