কীটনাশক পরিচিতি ও ব্যবহার
বাগান করার জন্য অবশ্যই কীটনাশক এর ধারণাটা ও রাখা টা ও জরুরী। একটি বাগান করার সময় আমাদের অনেক বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। বাগানের গাছের যত্ন, পরিচর্চা,বেড়ে ওঠা,আগাছা দমন,পোকামাকড় এর আক্রমন ইত্যাদি সকল ব্যাপারেই থাকতে হয় সজাগ দৃষ্টি। বাগানে গাছের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে যেটি সমস্যার সৃষ্টি করে তা হল পোকামাকড়।তাই এটির হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। কিন্তু এর অধিক ব্যবহার আবার গাছের ক্ষতি করতে পারে ।সুতরাং এটি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই এর সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে।
বাগানে অধিক ব্যবহৃত কিছু জৈব কীটনাশকের নাম ও তাদের ব্যবহারঃ
সাধারনত বাগানে ৭ থেকে ৮ ধরণের জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য কীটনাশক সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১। নিমঃ
উপাদানঃ নিম এর মাঝে দুই ধরনের উপাদান আছে। একটি হল এজাডাইরেক্টইন এবং লিমিনইড, দুটোই নিম ফল এবং নিম বীজ থেকে পাওয়া যায়।
প্রয়োগঃ গাছের পাতায় স্প্রে করে দিতে হবে।
কার্যকারিতাঃ পোকার হরমোন সিস্টেম এবং এদের বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে । এটা সবচেয়ে বেশি কাজ করে পোকা এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পতঙ্গ গুলো যখন ছোট থাকে এবং সম্পূর্ণ ভাবে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই তা পোকা গুলোকে নিয়ন্ত্রন করে ফেলে।
উপকারিতাঃ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।
অপকারিতাঃ বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে চলে যায়। অতি ধীরে কাজ করে। সূর্যালোকে কর্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং এই কীটনাশক উপকারি এবং ক্ষতিকর পোকামাকড়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।
সতর্কতাঃ যে পাতায় এই কীটনাশক দেয়া হয়েছে তা শুকানোর পূর্ব পর্যন্ত পোষা পশু-পাখিকে দূরে রাখতে হবে।
২.উদ্যানবান্ধব তেলঃ
উপাদানঃ অধিক পরিশুদ্ধিত পেট্রোলিয়াম তেল।
প্রয়োগঃ পানির সাথে মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করতে হবে।
কার্যকারিতাঃ পোকার উপর প্রলেপ পড়ে এর শ্বাস রুদ্ধ করে দেয় এবং এর খাদ্য গ্রহনে বাধা প্রদান করে।
উপকারিতাঃ মানুষ কিংবা গৃহপালিত পশুপাখির জন্য বিষাক্ত নয়। এবং কোন বিষও অবশিষ্টাংশ হিসেবে থাকে না।
অপকারিতাঃ এটা নরম শরীরের পোকার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। গাছের পাতা জ্বালিয়ে দিতে পারে।
সতর্কতাঃ এই তেল বিভিন্ন মাত্রার রয়েছে। কোন মৌসুমের জন্য কোনটা জেনে তারপর প্রয়োগ করতে হবে।
৩। পেরেনথ্রিনঃ
উপাদানঃ ক্রিসেন্থিমাম সিনেরারিফুলিয়াম থেকে নির্গত হয়।
প্রয়োগঃ পাউডার হিসেবে পাওয়া যায় এবং পাতায় ছড়িয়ে দিতে হবে।
কার্যকারিতাঃ পোকার শরীরের মাঝে বিষ ছড়িয়ে দেয় এবং এদের মৃত্যুর কারণ হয়।
উপকারিতাঃ দ্রুত কাজ করে। পশু-পাখির জন্য খুব কম ক্ষতিকর। এক দিনের মধ্যে ফল পাওয়া যায় ।
অপকারিতাঃ অধিক কার্যকরী কীটনাশক। যে কোন পোকা মেরে ফেলে। মৌমাছির জন্য খুব বিষাক্ত।
সতর্কতাঃ সতর্কতার সাথে ব্যাবহার করতে হয়। যে সকল পোকা মারতে কষ্ট হয় তাদের ক্ষেত্রে এই বিষ প্রয়োগ করতে হয়।
৪। সাবাদিল্লাঃ
উপাদানঃ সাবাদিল্লা ফুলের মাটির নিচের বীজ।
প্রয়োগঃ এটিকে পাউডার হিসেবে পাওয়া যায় এবং পরে স্প্রে করে গাছে ছড়িয়ে দিতে হয়।
কার্যকারিতাঃ পেটের বিষ হিসেবে কাজ করে।
উপকারিতাঃ ছারপোকার ক্ষেত্রে অধিক উপকারি। (বিশেষ করে হেমিতেরা গোত্রের পোকার ক্ষেত্রে অধিক কাজ করে)
অপকারিতাঃ ভ্রমর কিংবা মৌমাছির জন্য অধিক বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ম্যামাল গোত্রের মিউকাস সদস্যদের জন্য তা বেশ ক্ষতিকর।
সতর্কতাঃ যে কোন স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা নিতে হবে।
৫। রোটেননঃ
উপাদানঃ গ্রীষ্মকালীন কলাই জাতীয় গাছের মূল থেকে পাওয়া যায়।
প্রয়োগঃ গুঁড়া করে গাছের মূলে দিতে হবে।
কার্যকারিতাঃ কোষের কার্যকারিতায় বাধা প্রদান করে। পোকামাকড়কে তাদের কোষের জন্য অক্সিজেন নিতে বাধা দেয়।
উপকারিতাঃ অবশিষ্টাংশ দ্বারা খুব কম ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। সূর্যালোকে খুব সহজেই ভেঙ্গে যায়।
অপকারিতাঃ অধিক কর্মক্ষম কীটনাশক ।
সতর্কতাঃ বিকেলে যখন মৌমাছি কম থাকে তখন প্রয়োগ করতে হয়।
৬। পটাশিয়াম বাই- কার্বনেটঃ
উপাদানঃ পটাশিয়াম বাই- কার্বনেট হল উদ্যান তেলের সমন্বয়। বাণিজ্যিক ভাবে এটা গ্রিনকেউর বা কালিগ্রিন নামে বাজারে পাওয়া যায়। নিজেও এটা ঘরে বানিয়ে নেয়া যায়। বেকিং সোডা বা সোডিয়াম বাই- কার্বনেটও একি রকম ফাঙ্গাস সমস্যার জন্য ব্যাবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে দেখা গেছে পটাশিয়াম বাই- কার্বনেটই অধিক কাজ করে এই সমস্যা সমাধান এর ক্ষেত্রে।
প্রয়োগঃ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথেই স্প্রে করতে হবে কিংবা সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
কার্যকারিতাঃ এটা কি ভাবে কাজ করে তা এখনো পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় না, তবে ধারনা করা হয় বাই- কার্বনেট পোকামাকড়ের দেহের কোষের ক্ষতি করে এবং মাটির পি, এইচ বৃদ্ধি করে আবার ফাঙ্গাস আক্রমন প্রতিহত করে।
উপকারিতাঃ এটি দ্রুত কাজ করে। সবজি ঘরে তোলার আগে পর্যন্ত এটা ব্যাবহার করা যায়।
অপকারিতাঃ কড়া সূর্যের মাঝে এটি গাছের পাতা পুড়িয়ে ফেলতে পারে।
সতর্কতাঃ মাত্রা দেখে আগে ক্ষুদ্র পরিসরে এটা প্রয়োগ করে দেখতে হবে।